খুলনার দাকোপ উপজেলায় এক ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে জেলেদের নামে বরাদ্দকৃত চাল আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। তাদের প্রত্যেককে ২০ কেজি করে চাল দেয়ার কথা থাকলেও ৪ কেজি করে চাল দেয়ার অভিযোগ করেছে জেলেরা।
এ ঘটনায় সোমবার ইউনিয়নের কার্ডধারী জেলেরা ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে খুলনা বিভাগীয় মৎস্য দপ্তরের উপ-পরিচালক বরাবর চাল আত্মসাতের লিখিত অভিযোগ করেছেন।
অভিযুক্ত চেয়ারম্যানের নাম সুদেব কুমার রায়। সে উপজেলার বানিয়াশান্তা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান।
মা ইলিশ রক্ষা ও ইলিশের উৎপাদন বাড়ানোর লক্ষ্যে ৯ অক্টোবর থেকে ৩০ অক্টোবর ইলিশ মাছ ধরা নিষিদ্ধ করায় জেলেদের জন্য ওই চাল বরাদ্দ দিয়েছিল সরকার।
অভিযোগে জেলেরা উল্লেখ করেছেন, ওই ইউনিয়নে নিবন্ধিত জেলের সংখ্যা ১০৭ জন। তাদের প্রত্যেককে ২০ কেজি করে চাল দেয়ার কথা থাকলেও ৪ কেজি করে চাল দেয়া হয়েছে। চেয়ারম্যান নিবন্ধিত কার্ডধারী জেলেদের চাল তুলে নিয়ে আত্মসাৎ করেছেন। এ ব্যাপারে জেলেরা তাৎক্ষণিক প্রতিবাদ করলেও চেয়ারম্যান তা আমলে নেননি। পরে ১৭ জন জেলে স্বাক্ষর করে খুলনা মৎস্য দপ্তরের উপ-পরিচালক বরাবর অভিযোগ করেছেন।
এছাড়া ওই উপজেলার অন্য আটটি ইউনিয়নের জেলেরাও চাল না পাওয়ায় গণমাধ্যম কর্মীদের সামনে অভিযোগ করেছেন।
খুলনা জেলা মৎস্য কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, দাকোপ উপজেলার ৯টি ইউনিয়নে এক হাজার নিবন্ধিত জেলেদের নামে অক্টোবর মাসে ২০ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেয়া হয়। এ মাসের ১৬ তারিখে চাল বিতরণ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও কয়েকটি ইউনিয়নের জেলেরা এখনও চাল পাননি বলে জানা গেছে।
বাজুয়া ইউনিয়নের জেলেরা জানিয়েছেন, গত ২৫ অক্টোবর ইউনিয়ন পরিষদ থেকে তাদেরকে চাল দেয়া হয়েছে। তবে কার্ডধারী জেলেদের অনেকেই অভিযোগ করেছেন চাল বিতরণ কবে হয়েছে তা তারা জানতে পারেননি।
বানিয়াশান্তা ইউনিয়নের কার্ডধারী জেলে ইউছুফ হাওলাদার, রাজু হাওলাদার, আনারুল ইসলাম, হাসেম গাজীসহ অনেকে অভিযোগ করে বলেন, আমার জেলে কার্ড থাকলেও কোনো চাল দেয়া হয়নি। আমরা শুনেছি চাল তুলেছেন চেয়ারম্যান। কিন্তু কেন বিতরণ করা হয়নি, তা জানি না। নিয়ম অনুযায়ী সরকারি কার্ড যাদের আছে, তারা চাল পাবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বানিয়াশান্তা ইউনিয়ন পরিষদের এক সদস্য অভিযোগ করে বলেন, চেয়ারম্যান নিজের লোক দিয়ে গুদাম থেকে কিছু চাল তুলে কয়েকজন জেলেকে ডেকে বিতরণ করেছেন বলে শুনেছি। সেখানে চাল কম পেয়ে জেলেরা হইচই করেছেন।
অভিযোগের সত্যতা নিশ্চিত করে দাকোপ উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা জয়দেব পাল বলেন, বানিয়াশান্তা ইউনিয়নে ১০৭ জন নিবন্ধিত জেলের প্রত্যেকের নামে ২০ কেজি করে চাল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। চাল কম দেয়ার বিষয়ে জেলেদের অভিযোগের ভিত্তিতে সোমবার বিকেলে তদন্ত করা হয়েছে।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে ইউপি চেয়ারম্যান সুদেব কুমার রায় বলেন, ইউনিয়নে নিবন্ধিত জেলের সংখ্যা অনেক। এবার ইলিশ প্রজনন মৌসুমের মধ্যে থেকে ১০৭ জনকে চাল দেয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, আমার বিরোধী পক্ষরা চক্রান্ত করে একটি বানোয়াট অভিযোগ ডিডি অফিসে পাঠিয়েছে। তদন্ত করলে বিষয়টি পরিষ্কার হবে।
দাকোপ উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. আবদুল ওয়াদুদ বলেন, বিকেলে এ ধরনের অভিযোগের কথা শুনেছি। মঙ্গলবার ইউপি চেয়ারম্যান ও অভিযোগকারী জেলেদের কাছ থেকে এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হবে। এ ঘটনায় কেউ দোষী সাবস্ত হলে তার বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।
টাইমস/এইচইউ